ফ্রোজেন ফুডের উপকারিতা, দাম ও বাংলাদেশের জনপ্রিয় ব্র্যান্ডের নাম
ফ্রোজেন ফুড কী?
ফ্রোজেন ফুড হলো এমন খাবার যেটি একটি বিশেষ প্রক্রিয়ায় হিমায়িত (ফ্রিজ) করে সংরক্ষণ করা হয়, যাতে তার পুষ্টিগুণ, স্বাদ ও গুণগত মান দীর্ঘদিন ধরে অটুট থাকে। এতে শাকসবজি, ফলমূল, মাছ, মাংস, রান্না করা খাবার বা তৈরি খাবারের উপকরণ—সবই থাকতে পারে।
উদাহরণ:
হিমায়িত মুরগি বা মাছ
প্যাকেটজাত ফ্রোজেন সবজি (যেমন মটরশুঁটি, গাজর, ব্রকলি)
রেডি-টু-কুক খাবার (যেমন পরোটা, সামোসা, নুডলস)
এই খাবারগুলো সাধারণত তাজা অবস্থায় ফ্রিজিং প্রযুক্তির মাধ্যমে দ্রুত হিমায়িত করা হয়, যাতে ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি বন্ধ থাকে এবং খাদ্য নিরাপদ থাকে। ফলে এটি দীর্ঘদিন পর্যন্ত ব্যবহারযোগ্য হয়।
ফ্রোজেন ফুড কি স্বাস্থ্যকর?
ফ্রোজেন ফুড বা হিমায়িত খাবার সাধারণত সময় বাঁচানো ও সহজ উপায়ে রান্নার জন্য পরিচিত। কিন্তু অনেকেই প্রশ্ন করেন—ফ্রোজেন ফুড কি স্বাস্থ্যসম্মত? বিশেষ করে শিশু, মধ্যবয়সী, বৃদ্ধ, নারী ও পুরুষদের জন্য কি এটি উপযোগী?
উত্তর হলো—হ্যাঁ, সঠিকভাবে বাছাই করা হলে ফ্রোজেন ফুড হতে পারে একটি পুষ্টিকর, নিরাপদ ও সাশ্রয়ী খাদ্যবিকল্প। নিচে আমরা এই বিষয়ের উপর বিস্তারিত আলোচনা করছি।
গবেষণা কী বলে?
- চিনি ও লবণবিহীন ফ্রোজেন ফলমূল ও সবজি বেছে নিন।
- চর্বিহীন মাছ ও মাংস নির্বাচন করুন।
- হোল গ্রেইন বা সম্পূর্ণ শস্যযুক্ত প্রস্তুত খাবার গ্রহণ করুন
- পরিমিত ক্যালরিযুক্ত রেডি মিল বেছে নিন।
গবেষণায় প্রমাণ: ইউসি ডেভিস (UC Davis) বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় বলা হয়, ফ্রোজেন সবজি ও ফলমূল অনেক সময় তাজা খাবারের চেয়ে বেশি পরিমাণ ভিটামিন এ ও সি ধরে রাখে। কারণ, ফসল তোলার পরপরই হিমায়িত করায় পুষ্টিগুণ অক্ষুণ্ন থাকে।
শিশুদের জন্য ফ্রোজেন ফুড (বয়স ১–১২)
শিশুদের উন্নত শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য প্রয়োজন প্রচুর ভিটামিন, মিনারেল ও প্রোটিন।উপকারিতা:
- ফ্রোজেন আম, বেরি, মটরশুঁটির মতো ফল ও সবজি থেকে পাওয়া যায় ভিটামিন সি ও ফাইবার।
- ফ্রোজেন মাছ বা চিকেন ফিঙ্গার প্রোটিন ও আয়রনের ভালো উৎস হতে পারে।
সতর্কতা: অতিরিক্ত লবণ, চিনি বা কৃত্রিম রঙযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন।
পরিসংখ্যান: আমেরিকান অ্যাকাডেমি অফ পেডিয়াট্রিকস-এর মতে, যেসব শিশু নিয়মিত ফ্রোজেন সবজি খায়, তারা প্রতিদিন প্রয়োজনীয় সবজি গ্রহণের ক্ষেত্রে ২৭% বেশি সফল।
প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য (বয়স ২৫–৫৫)
এই বয়সে শরীরের শক্তি বজায় রাখা, রোগ প্রতিরোধ ও ওজন নিয়ন্ত্রণ গুরুত্বপূর্ণ।
উপকারিতা:
ফ্রোজেন মিল যেগুলোতে থাকে শস্য, প্রোটিন ও সবজি—সেগুলো কাজের ব্যস্ত সময়ে সহজ সমাধান।
পরিমিত ক্যালরির মাধ্যমে ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।
সতর্কতা: বেশি চর্বি ও সোডিয়ামযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন। টেস্টি কিন্তু উচ্চ ক্যালরিযুক্ত রেডি মিল সচেতনভাবে বাছাই করুন।
পরিসংখ্যান: জার্নাল অফ নিউট্রিশনের ২০২০ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, যারা নির্ধারিত ফ্রোজেন মিল খেয়েছেন, তারা ৩ মাসে ৫০% বেশি ওজন কমিয়েছেন অন্যদের তুলনায়।
বৃদ্ধদের জন্য (বয়স ৬০+)
বৃদ্ধ বয়সে অনেকের রান্না করা কষ্টকর হয়, খাবারে আগ্রহ কমে, হজম দুর্বল হয়।
উপকারিতা:
রান্না ছাড়াই বা হালকা গরম করেই খাওয়া যায়, যা সুবিধাজনক।
ফাইবার, ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ ফ্রোজেন খাবার হাড়ের স্বাস্থ্য ও হজমে সহায়ক।
সতর্কতা: কম সোডিয়াম ও উচ্চ ফাইবার যুক্ত খাবার বেছে নিন। বেশি প্রক্রিয়াজাত ও ভাজা খাবার এড়িয়ে চলুন।
পরিসংখ্যান: ব্রিটিশ নিউট্রিশন ফাউন্ডেশন জানায়, ফ্রোজেন খাবার খাওয়া বয়স্কদের ৬৪% তাদের প্রতিদিনের ফাইবার ও ভিটামিন সি এর চাহিদা পূরণ করতে পারেন, যেখানে কেবল তাজা খাবার খাওয়াদের ক্ষেত্রে তা ছিল মাত্র ৩৮%।
নারীদের জন্য ফ্রোজেন ফুড
নারীদের জন্য বিশেষ পুষ্টি উপাদানের প্রয়োজন যেমন: আয়রন, ক্যালসিয়াম, ফলিক অ্যাসিড ইত্যাদি। উপকারিতা:
ফ্রোজেন পালং শাক বা কলিজা থেকে পাওয়া যায় আয়রন ও ফলেট।
ফ্রোজেন সবজি বা হোল গ্রেইন মিল ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।
সতর্কতা: গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী নারীরা মার্কারি কম এমন ফ্রোজেন মাছ খেতে পারেন। লবণ ও চিনি কম এমন খাবার বেছে নিন।
পরিসংখ্যান: ইউরোপিয়ান জার্নাল অফ ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশন-এর ২০২১ সালের এক গবেষণায় বলা হয়, যারা ফ্রোজেন খাবার ব্যবহার করেন তারা ১৮% বেশি সবজি ও ২২% বেশি ফাইবার গ্রহণ করেন।
ফ্রোজেন ফুডের উপকারিতা
বর্তমানে ফ্রোজেন ফুড বা হিমায়িত খাদ্য বাংলাদেশের বাজারেও জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। আধুনিক জীবনযাত্রার ব্যস্ততার মাঝে, স্বাস্থ্যসম্মত, সাশ্রয়ী এবং দীর্ঘমেয়াদে সংরক্ষণযোগ্য খাদ্যের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। ফ্রোজেন ফুড ঠিক সেই প্রয়োজন পূরণ করছে। চলুন দেখে নেওয়া যাক এর প্রধান উপকারিতা এবং সাথে কিছু তথ্য-পরিসংখ্যান।
১. সময় বাঁচায় এবং সহজতর রান্না
ফ্রোজেন ফুড সাধারণত প্রি-কাট, প্রি-কুকড এবং প্রস্তুত থাকে, ফলে রান্নার সময় অনেকটাই কমে যায়। একটি মার্কিন গবেষণায় দেখা গেছে, ৭২% ভোক্তা ফ্রোজেন ফুড কেনেন শুধুমাত্র সময় সাশ্রয়ের কারণে। অনেক ফ্রোজেন আইটেম মাত্র ১০ থেকে ১৫ মিনিটে প্রস্তুত করা যায়।
২. দীর্ঘমেয়াদে সংরক্ষণযোগ্য
তাজা খাবারের তুলনায় ফ্রোজেন ফুড অনেকদিন ভালো থাকে। ফ্রিজারে সংরক্ষণের মাধ্যমে ৮ থেকে ১২ মাস পর্যন্ত পুষ্টিগুণ অক্ষুণ্ন রাখা সম্ভব। USDA (মার্কিন কৃষি বিভাগ) অনুসারে, সঠিকভাবে সংরক্ষিত হিমায়িত খাবার ৮-১২ মাস পর্যন্ত ভালো থাকে।
৩. পুষ্টিগুণ বজায় থাকে
অনেকের ধারণা, ফ্রোজেন ফুডে পুষ্টিগুণ কম থাকে। কিন্তু বাস্তবে, আধুনিক ফ্রিজিং প্রযুক্তির কারণে খাবার তোলা মাত্রই তা হিমায়িত করা হয়, ফলে অনেক সময় তা তাজা খাবারের থেকেও বেশি পুষ্টিকর হয়। ইউসি ডেভিস ইউনিভার্সিটির একটি গবেষণায় বলা হয়েছে, ফ্রোজেন সবজি ও ফলমূলের ভিটামিন এ ও সি-এর পরিমাণ তাজা সংরক্ষিত খাবারের চেয়ে বেশি হতে পারে।
৪. সাশ্রয়ী ও বাজেট-বান্ধব
ফ্রোজেন ফুড সাধারণত মৌসুমভিত্তিক তাজা খাবারের তুলনায় অনেক কম দামে পাওয়া যায়। একটি ২০২২ সালের নিলসেন রিপোর্ট অনুসারে, ফ্রোজেন ফল ও সবজি ২০–৩০% পর্যন্ত সাশ্রয়ী।
৫. খাদ্য অপচয় হ্রাস করে
ফ্রোজেন খাবার সহজেই প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যবহার করা যায় এবং বাকি অংশ সংরক্ষণ করা যায়, ফলে খাদ্য অপচয় অনেক কম হয়। WRAP UK-এর একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, ফ্রোজেন খাবার ব্যবহারে ৪৭% পর্যন্ত খাবার অপচয় কমে যায়।
৬. স্বাস্থ্যগত উপকারিতা
পুষ্টিগুণ অক্ষুণ্ন থাকে:
- ফলমূল ও সবজি খাওয়ার অভ্যাস বৃদ্ধি পায়:
- ওজন নিয়ন্ত্রণ ও ক্যালরি ম্যানেজমেন্ট:
- কম প্রিজারভেটিভস
৭. নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত
ফ্রিজিং প্রক্রিয়া জীবাণু বৃদ্ধির গতি থামিয়ে দেয়, ফলে ফ্রোজেন খাবার তুলনামূলকভাবে নিরাপদ। CDC (Centers for Disease Control) জানায়, ০ ডিগ্রি ফারেনহাইটে সংরক্ষিত খাবার অনির্দিষ্টকাল পর্যন্ত নিরাপদ থাকে।
৮. সারা বছর সব কিছু পাওয়া যায়
ফ্রোজেন ফুডের মাধ্যমে মৌসুমী ফল-সবজি বা বিদেশি খাবার সারা বছর সহজলভ্য হয়। Statista অনুযায়ী, ২০২৩ সালে বিশ্বব্যাপী ফ্রোজেন ফুডের বাজার মূল্য ছিল প্রায় ২৫০ বিলিয়ন ডলার এবং তা প্রতি বছর ৫.১% হারে বাড়ছে।
৯. খাদ্য পরিকল্পনা ও ডায়েট অনুসরণে সহায়ক
বাংলাদেশের জনপ্রিয় ফ্রোজেন ফুড ব্র্যান্ডের নাম ও দাম
বর্তমানে বাংলাদেশের বাজারে বেশ কিছু নামকরা ফ্রোজেন ফুড ব্র্যান্ড রয়েছে, যারা মানসম্পন্ন ও সহজে রান্না করা যায়—এমন খাবার সরবরাহ করছে। নিচে জনপ্রিয় কিছু ব্র্যান্ড এবং তাদের কিছু পণ্যের গড় মূল্য উল্লেখ করা হলো:
Kazi Farms Kitchen
Golden Harvest
Bengal Meat
Paragon
CP (Charoen Pokphand)
নোট:
দামের তারতম্য হতে পারে দোকান ও অফারের উপর নির্ভর করে।
ফ্রোজেন খাবার কেনার সময় উৎপাদনের তারিখ ও এক্সপায়ারির তারিখ দেখে নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।
প্রয়োজনে কম চর্বিযুক্ত, কম লবণযুক্ত খাবার বেছে নিতে পারেন।
সময় বাঁচানো থেকে শুরু করে খাদ্য অপচয় কমানো, সারা বছর সবজি ও ফলমূলের সহজলভ্যতা নিশ্চিত করা এবং সুষম খাদ্য পরিকল্পনা অনুসরণে সহায়তা করা—এসবই ফ্রোজেন ফুডের গুরুত্বপূর্ণ দিক। শিশুদের থেকে শুরু করে বৃদ্ধ পর্যন্ত, প্রতিটি বয়সের মানুষের পুষ্টি চাহিদা পূরণে ফ্রোজেন ফুড কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।
বাংলাদেশে কাজী ফার্মস কিচেন, গোল্ডেন হার্ভেস্ট, বেঙ্গল মিট, প্যারাগন, এবং সিপি'র মতো ব্র্যান্ডগুলো মানসম্মত ফ্রোজেন ফুড সরবরাহ করছে, যা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে স্বাচ্ছন্দ্য এনে দিচ্ছে। তাই, যখনই আপনার জীবনে সময়, পুষ্টি, এবং সাশ্রয়ের সমন্বয় প্রয়োজন হবে, ফ্রোজেন ফুড হতে পারে আপনার জন্য একটি চমৎকার সমাধান। আপনি চাইলে এখনই ফ্রোজেন এবং রেডি মেইড খাবার অনলাইনে ঘরে বসেই অর্ডার করতে পারেন QuickyBD থেকে।
ফ্রোজেন ফুডকে আপনার দৈনন্দিন খাদ্যাভ্যাসের অংশ করে তুলে আপনি একদিকে যেমন আপনার মূল্যবান সময় বাঁচাবেন, তেমনি নিশ্চিত করতে পারবেন একটি স্বাস্থ্যকর ও সুষম জীবনধারা
স্টার বিডি নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url