বাচ্চাদের জন্য ওটস এর উপকারিতা

ওটস হলো, এক ধরনের খাদ্যশস্য। চিকিৎসা বিজ্ঞান এটিকে সুপারফুড বলে আখ্যায়িত করেছেন। শরীরে সব ধরনের পুষ্টি যোগানো থেকে শুরু করে ওজন কমানো পর্যন্ত এই শস্যের জুড়ি নেই। ওটস বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে স্বাস্থ্য সচেতন মহলে।
বাচ্চাদের জন্য ওটস এর উপকারিতা
বাচ্চাদের খাদ্য তালিকায় পুষ্টিকর ওটস একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে নিয়েছে। এর সহজ হজমযোগ্যতা ও পুষ্টিগুণের কারণে এটি শিশুদের জন্য আদর্শ খাবার হিসেবে বিবেচিত হয়।​

বাচ্চাদের ওটস কেন খাওয়া উচিত?

বাচ্চাদের জন্য ওটস একটি পুষ্টিকর ও সহজে হজমযোগ্য খাবার, যা তাদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এর মধ্যে রয়েছে ফাইবার, প্রোটিন, আয়রন, ক্যালসিয়াম, জিঙ্ক, ম্যাগনেসিয়াম এবং ভিটামিন বি কমপ্লেক্স, যা শিশুদের হজম প্রক্রিয়া উন্নত করে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে সহায়তা করে 


ওটসের পুষ্টিগুণ অনেক। আধা কাপ ওটসে রয়েছে দৈনন্দিন চাহিদার ১৯১ শতাংশ ম্যাংগানিজ, ৪১ শতাংশ ফসফরাস, ৩৪ শতাংশ ম্যাগনেসিয়াম, ২৪ শতাংশ কপার, ২০ শতাংশ আয়রন, ২০ শতাংশ জিঙ্ক, ১১ শতাংশ ফোলেট, ৩৯ শতাংশ ভিটামিন বি ১ (থায়ামিন), ১০ শতাংশ ভিটামিন বি ৫ (প্যান্টোথেনিক অ্যাসিড)। 


তবে, ওটস খাওয়ানোর সময় কিছু বিষয় মাথায় রাখা জরুরি। অতিরিক্ত প্রসেসড ওটস, যেমন ইনস্ট্যান্ট ওটস, প্রাকৃতিক পুষ্টিগুণ কমিয়ে দিতে পারে এবং এতে অতিরিক্ত চিনি বা ফ্লেভার থাকতে পারে, যা শিশুদের জন্য ক্ষতিকর । এছাড়া, কিছু শিশুর ওটসে অ্যালার্জি থাকতে পারে, তাই প্রথমবার খাওয়ানোর সময় সতর্ক থাকা উচিত।​

বাচ্চাদের জন্য ওটস এর উপকারিতা

বাচ্চাদের জন্য ওটস একটি পুষ্টিকর ও সহজে হজমযোগ্য খাবার, যা তাদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এর মধ্যে রয়েছে ফাইবার, প্রোটিন, আয়রন, ক্যালসিয়াম, জিঙ্ক, ম্যাগনেসিয়াম এবং ভিটামিন বি কমপ্লেক্স, যা শিশুদের হজম প্রক্রিয়া উন্নত করে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে সহায়তা করে

১. হজমে সহায়ক
ওটসে থাকা দ্রবণীয় ও অদ্রবণীয় ফাইবার অন্ত্রের স্বাস্থ্য উন্নত করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে সহায়তা করে ।​

২. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি
ওটসে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস ও বিটা-গ্লুকান শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।​

৩. হাড় ও দাঁতের গঠনে সহায়ক
ওটসে থাকা ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস শিশুর হাড় ও দাঁতের গঠন মজবুত করে ।​

৪. ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক
ওটস দীর্ঘ সময় পেট ভরা রাখে, যা অতিরিক্ত খাওয়া থেকে বিরত রাখে এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে 

৫. শক্তির উৎস
ওটস শিশুদের জন্য একটি ভালো শক্তির উৎস, যা তাদের দৈনিক কার্যকলাপের জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি সরবরাহ করে ।​

৬. সহজে হজম হয়
ওটস সহজে হজম হয়, যা শিশুদের জন্য আদর্শ কারণ তাদের পাচনতন্ত্র এখনও বিকশিত হচ্ছে ।​

৭. ত্বক ও চুলের যত্নে সহায়ক
ওটসে থাকা প্রোটিন ও অন্যান্য উপাদান শিশুর ত্বক ও চুলের যত্নে সহায়ক

বাচ্চাদের জন্য ওটস এর অপকারিতা

১. অতিরিক্ত ফাইবারের কারণে হজমে সমস্যা

ওটসে উচ্চমাত্রায় ফাইবার থাকায়, ছোট বাচ্চাদের হজমে সমস্যা হতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, পাঁচ বছরের নিচের বাচ্চাদের ওটস খাওয়ানো উচিত নয়, কারণ এতে থাকা ফাইবার তাদের হজম প্রক্রিয়ায় বিঘ্ন ঘটাতে পারে

২. অ্যালার্জি ও ফুড প্রোটিন-ইনডিউসড এন্টারোকোলাইটিস সিনড্রোম (FPIES)

ওটস কিছু বাচ্চার মধ্যে অ্যালার্জি সৃষ্টি করতে পারে, যার ফলে ত্বকে জ্বালা, বমি বা ডায়রিয়া হতে পারে। এছাড়া, ওটস FPIES নামক একটি বিরল অ্যালার্জির কারণ হতে পারে, যা খাওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর বমি ও ডায়রিয়া সৃষ্টি করে ।​

৩. প্রক্রিয়াজাত ওটসের ক্ষতিকর প্রভাব

ইনস্ট্যান্ট বা ফ্লেভারড ওটস প্রক্রিয়াজাত হওয়ার সময় অতিরিক্ত চিনি, লবণ ও কৃত্রিম উপাদান যোগ করা হয়, যা বাচ্চাদের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে ।​

৪. গ্লুটেন সংবেদনশীলতা

ওটস প্রাকৃতিকভাবে গ্লুটেন-মুক্ত হলেও, প্রক্রিয়াজাত করার সময় গ্লুটেনযুক্ত শস্যের সংস্পর্শে আসতে পারে, যা গ্লুটেন সংবেদনশীল বাচ্চাদের জন্য সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।​

৫. ভারী ধাতু ও কীটনাশকের উপস্থিতি

কিছু ওটস পণ্যে ক্যাডমিয়াম, আর্সেনিক ও কীটনাশকের অবশিষ্টাংশ পাওয়া গেছে, যা বাচ্চাদের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। তাই, ওটস কেনার সময় নির্ভরযোগ্য ব্র্যান্ড বেছে নেওয়া উচিত

বাচ্চাদের ওটস রান্নার নিয়ম

বাচ্চাদের জন্য ওটস একটি পুষ্টিকর ও সহজে হজমযোগ্য খাবার। তবে, এটি সঠিকভাবে রান্না করা জরুরি, যাতে শিশুদের জন্য এটি সুস্বাদু ও স্বাস্থ্যকর হয়। নিচে বাচ্চাদের ওটস রান্নার কিছু সহজ ও কার্যকর নিয়ম তুলে ধরা হলো:​

ওটস পোরিজ (Oats Porridge)

  • রোলড ওটস – ৪ টেবিল চামচ

  • দুধ – ১ কাপ

  • মধু – ১ চা চামচ (ঐচ্ছিক)

  • ফল (যেমন কলা বা আপেল) – ছোট টুকরো করে কাটা​

রান্নার নিয়ম

  • একটি প্যানে দুধ গরম করুন।

  • দুধ ফুটে উঠলে তাতে ওটস যোগ করুন এবং মাঝারি আঁচে ৫-৭ মিনিট রান্না করুন।

  • ওটস নরম হয়ে গেলে মধু ও কাটা ফল যোগ করুন।

  • ঠান্ডা করে বাচ্চাকে পরিবেশন করুন।​

ওটস খিচুড়ি (Oats Khichdi)

উপকরণ:

  • ওটস – ১/২ কাপ

  • ডাল – ১/৪ কাপ

  • সবজি (গাজর, মটর, আলু) – ছোট টুকরো করে কাটা

  • জল – ২ কাপ

  • হালকা মসলা (ঐচ্ছিক)​

রান্নার নিয়ম

  • ওটস ও ডাল ধুয়ে নিন।

  • একটি প্যানে জল গরম করে তাতে ওটস, ডাল ও সবজি যোগ করুন।

  • মাঝারি আঁচে ১৫-২০ মিনিট রান্না করুন, যতক্ষণ না সব উপকরণ নরম হয়।

  • হালকা মসলা যোগ করে পরিবেশন করুন।​

ওটস ও কলার প্যানকেক (Oats and Banana Pancake)

উপকরণ

  • ওটস – ১ কাপ

  • পাকা কলা – ১টি

  • ডিম – ১টি

  • দুধ – ১/৪ কাপ

  • তেল – ভাজার জন্য​

প্রস্তুত প্রণালী:

  • ওটস ব্লেন্ড করে গুঁড়ো করুন।

  • একটি বাটিতে কলা চটকে তাতে ডিম ও দুধ মিশিয়ে নিন।

  • ওটস গুঁড়ো যোগ করে মিশ্রণ তৈরি করুন।

  • একটি প্যানে তেল গরম করে প্যানকেক তৈরি করুন।

  • দুই পিঠ সোনালি হওয়া পর্যন্ত ভাজুন।

  • ঠান্ডা করে বাচ্চাকে পরিবেশন করুন।​

বাচ্চাদের জন্য কোন ওটস ভালো

বাচ্চাদের জন্য রোলড ওটস বা হোলগ্রেইন ওটস সবচেয়ে উপযুক্ত। এগুলি কম প্রসেসড হওয়ায় পুষ্টিগুণ অক্ষুণ্ণ থাকে এবং এতে অতিরিক্ত চিনি বা ফ্লেভার থাকে না। ওটস কেনার সময় উপাদান তালিকা দেখে নিশ্চিত হওয়া উচিত যে এতে কোনো অতিরিক্ত উপাদান নেই।​

উপসংহার

ওটস একটি পুষ্টিকর ও সহজে হজমযোগ্য খাবার, যা বাচ্চাদের জন্য আদর্শ। সঠিকভাবে রান্না ও পরিবেশন করলে এটি শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশে সহায়তা করে। তবে, অতিরিক্ত প্রসেসড ওটস এড়িয়ে চলা এবং প্রথমবার খাওয়ানোর সময় সতর্ক থাকা উচিত।​

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

স্টার বিডি নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url